রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন
মৃদুভাষণ ডেস্ক :: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় হাসতে হাসতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন।
তবে মন্ত্রী বলছেন, আমি পদত্যাগ করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? বরং এই পদে থেকেই সমস্যার সমাধান করা উত্তম। আমি সব সময়ই হাসি আমার কালো মুখ কেউ দেখেনি। এটা কি দোষের? এ ঘটনায় আমার ক্ষমা চাওয়ার কথা না, তারপরও দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় অবশ্যই দোষী ব্যক্তির কঠোর শাস্তি হবে। প্রাথমিকভাবে আমারা দেখেছি, বাস চালকেরই দোষ । তবে তদন্তের পরই এর বিচার হবে। আমি আন্দোলনরত ভাই-বোনদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, অবশ্যই দায়ীদের বিচার হবে। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। দুর্ঘটনা রোধে আইনে সংশোধনী আনা হবে। শাজাহান খান আরও বলেন, বাসের রেষারেষিতেই এ দুর্ঘটনা তবে তা ব্রেক ফেলের জন্য কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। দোষী যেই হোক না কেন এ অপমৃত্যুর বিচার হবেই। এ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আগামীকাল মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করব, বৈঠকে এ বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, তাদের বিক্ষোভ অমূলক বলব না। এটা তারা করতেই পারে। আমি ছাত্র ভাই-বোনদের বলব আপনারা শান্ত হোন, উচ্ছৃঙ্খল হবেন না। এ ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি দেয়া হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত জাবালে নূর পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি।
রোববার দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মীম নিহত হন। বাসচাপায় আহত হন আরও ১৩ জন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে রোববার দুপুরেই সচিবালয়ে মোংলাবন্দরের জন্য মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে সাংবাদিকরা দুই শিক্ষার্থীর বাসচাপায় নিহত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
এ সময় মন্ত্রী হাসতে হাসতে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এটির সঙ্গে কি এটি রিলেটেড?’ তার পর বেশ কিছুক্ষণ হেসে বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
তখন সাংবাদিকরা বলেন, ‘চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় সড়কে নিয়মিত প্রাণ ঝরছে। আজও ঢাকার কুর্মিটোলায় একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে এদের (চালক-হেলপার) আপনিই প্রশ্রয় দেন। আপনার প্রশ্রয়ে তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে।’
জবাবে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে চাই- যে যতটুকু অপরাধ করবে, সে সেভাবেই শাস্তি পাবে। এই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতা করার কারও কোনো সুযোগ নেই।’
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির বিষয়ে যথাযথ বিচার হয় না বা হচ্ছে না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী আবারও হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে কিছু দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ যাত্রী মারা গেলেন। সেখানে কেউ কি এ রকম কথা বলে।’
এদিকে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নৌমন্ত্রী হাসতে হাসতে কথা বলায় সামাজিকমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার সকাল থেকে দুই সহপাঠী নিহতের প্রতিবাদে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছেন।
বিক্ষোভ থেকে দুই শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িত পরিবহন কর্মীদের ফাঁসি এবং নৌপরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
পরে দুপুর ১টায় শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবিনামা ঘোষণা করে তা মানতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন।
বিকাল সাড়ে চারটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়ক ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।