সোমবার, ০৮ মার্চ ২০২১, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন
সুলতানা শিরীন সাজি :: বেশ কয়েকদিন বৃষ্টির পর গতকাল অটোয়াতে খুব সুন্দর রোদেলা একটা দিন গেলো। গরমটাও সহনীয় ছিল। অনেক সকালে ঘুম ভাঙলো।
Alexandria island park এ একটা পিকনিক এ লিন্ডারা যাবে। রাইয়ান,রাশীক কে বললাম যেতে। রাশীক তেমন কোথাও সাথে যেতে পারেনা। সমবয়সী কেউ না থাকলে যেয়ে কমফোর্ট পায়না। রাশীকের বাবার কাজ ছিলো। শেষে রাইয়ানকে সাথে নিয়ে রওনা দিলাম। এক ঘন্টার ড্রাইভ। মন্ট্রিয়লের পথ এ আলেকজান্দ্রিয়া পড়ে। অনেক আগে মনিরভাই এর সাথে বেলায়েত ভাই,ভাবী এবং উনার মেয়েরা সহ আমরা গিয়েছিলাম। দশ বছর আগের কথা।
রাইয়ান পাশে বসে র্যাপ গান শুনছিল হাত পা নাচিয়ে মনের আনন্দে সাথে সাথে নিজেও গাইছিল। কি সব অদ্ভুত কথা। দু’এক জায়গায় শব্দগুলো এড়িয়ে যাচ্ছিল। আমি বললাম কিরে ক্লিন ভার্সন গাচ্ছিস বাবা? মুচকী হাসলো।
গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় গান বন্ধ করে অনেকক্ষন গল্প করলো রাইয়ান। এরকম ঘন্টাখানেক সময় আর বাচ্চাগুলো পাশে বসে কই। বসলেও হাতে থাকে ফোন। নাহয় টিভি ,নাহয় কম্পিউটার। আমরাও কি কম যাই? কথা বলতে আসলো,হয়তো ফোনে কথা বলছি নাহলে অন্য কোন কাজ।
খুব ভালো লাগছিল আমার। আমার ১৬ বছরের কিশোর ছেলে আর আমি। কত কি কথা বলছিল ও। সেই কবে দেশে গেছিল ও। কেনো আর দেশে যাচ্ছিনা একসাথে।দেশে গেলে আর নানীর মত আর কাউকে পাবেনা। নানীর সাথে আগে কথা বলতো ,এখন আর কারো সাথে কথা হয়না ।আমি অবাক হয়ে গেলাম। এত কিছু ভাবে আমার বাচ্চাটা।
পিকনিক স্পটে ঢোকার মুখেই দেখি রিয়াজ ভাই, লিন্ডা,সূচী,পাখি ভাবীরা বসে আছে।জুয়েল ভাই ও ওখানে বসেছিল। যখন ১৮ বছর আগে অটোয়ায় এসেছিলাম। জুয়েল ভাইরা পিকনিকের আয়োজন করতো।সময় কত বদলে যায়। সকালের নাস্তা দুপুরে খেলাম।
বেশির ভাগই চেনা মুখ। ফোবানা নিয়ে আলোচনা হলো। অনেকেই বললো,ফোবানায় আসবে। অটোয়ায় ফোবানা হচ্ছে শুনে সবাই খুব খুশি। দুপুরে বিরিয়ানী দিলো। সবচেয়ে মজার ছিল তরমুজ। কিছু খাবার আছেনা সবাই মিলে খেলে খুব ভালো লাগে। যেমন মুড়ি-চানাচুর, আচার ,আম ভর্তা। তরমুজ একেক জন আনে আর শেষ হয়ে যায়। সূচী আনলো। রেজা ভাই নিজেও দিয়ে গেলেন। কিযে ভালো একটা মানুষ।
বদরুন এর ছেলে ফারহান এর সাথে আর সূচীর ছেলে রিজভীর সাথে রাইয়ান ঘুরলো,আড্ডা দিলো।
সবাই মিলে ছবি তুলতে গেলাম লেক এর পাড়ে। ফেরার পথ লিন্ডা পড়ে ব্যাথা পেলো। খুব মন খারাপ হয়ে গেলো সবার।
আলেকজান্দ্রিয়া শহরটা ছোট্ট। কি ভালো লাগছিল। ভাবছিলাম, এখানে জীবন যাপন কেমন কে জানে! ছোট্ট একটা গ্যাস স্টেশন। কিছু ছোট দোকান পাট। বড় কিছুর জন্য এদের ছুটতে হয় শহরের দিকে।
তবু হয়তো কোন না কোন কারনে এখানেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। যেমন করে আমরা অটোয়াতে ভালোই আছি।
ফেরার পথও রাইয়ানের কত গল্প। বাবাকে নিয়ে ,ভাইকে নিয়ে। ও অনেক ছোট ছিল,বাবার তখন কি সার্জারী হয়েছিল। কেনো ও বোঝেনি। বললো, ওর বাবা যে টু টাইমস ক্যান্সার সারভাইভার একথা শুনে ওর বন্ধুরা নাকি খুব অবাক হয়ে যায়। বাবার জন্য আরো অনেক অনুভূতির কথা বললো ও।
লেখাপড়া শিখে কি করবে ? সায়েন্স না নিলে ওতো ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেনা রাশীকের মত। তাহলে? আমি বললাম,সবাই ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার হয়না। একটা সমাজে নানা রকম মানুষের দরকার। ও কতটুকু কি বুঝলো কে জানে। শুধু বললাম আগামী দুটো বছর একটু ভালো করে মন দিয়ে পড়ো,যে পড়ছো তাই । তারপর যা ভালো লাগে,তাই পড়ো।
দূরে তাকিয়ে কোন ভাবনায় ডুবে গেলো ও।
আমি বললাম ,বেশি ভাবতে হবেনা বাবা। যাই পড়ো,যাই করো,একটা ভালো মানুষ হোস বাবা। আমরা বুড়ো হলে একটু খোঁজ খবর নিস। আমি কখনো বাচ্চাদের বলিনা, তোমরা যেমন খুশি ভালো থেকো, আমাদের দেখতে হবেনা। ওরা ছাড়া কে আমাদের দেখবে? আমি কিছুতেই বলতে পারিনা তোমরা ছাড়া আমাদের চলবে।। হয়তো অনেকেই সত্যি ,যারা আশা করেনা। কিন্তু আমি আশা করি। আমি ভাবতে চাই,ওরা যখন নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হবে,তখন ও আমাদের জন্য একটু ভাবনা থাকবে। নাহলে কি করে হবে? প্রতিদিন না ,মাঝে মাঝে একটা বিকেল বা সন্ধ্যায় কিছু সময়,গল্প কথায়! বা বেড়াতে গেলে কোথাও!
এইসব ভাবনার মধ্যে দিয়ে শেষ বিকেলের আগেই পৌছে গেলাম বাসায়। মনেহলো একটা সুন্দর বিকেলের কাছে জমা থাকলো আমাদের মা ছেলের সুন্দর কিছু সময়।
জীবনটা আসলেই সুন্দর। বেঁচে থাকা সত্যি দারুণ ব্যাপার।
জুলাই ৩০’২০১৮
অটোয়া