শুক্রবার, ০৫ মার্চ ২০২১, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন
মৃদুভাষণ ডেস্ক :: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য কূটনৈতিকদের কাছে তুলে ধরেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার এসব দাবি ও লক্ষ্য উপস্থাপন করেন ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন। এসময়ে কূটনৈতিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহনে নির্বাচনী পরিবেশ চায়। সেটা নিশ্চিত হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কিভাবে পরিবেশ পাবো তা এসব দাবি ও লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে।
বিকেল ৩টা থেকে এক ঘন্টার এই বৈঠকের শুরুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা ও পরিচিতি পর্ব উপস্থাপন করেন। পরে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যের লিখিত বক্তব্য রাখেন। এরপর ৮টি রাষ্ট্রের কূটনৈতিকরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এসব প্রশ্নোত্তরও ড. কামাল হোসেন দেন। অনুষ্ঠান শেষে চা পর্ব শেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।
কূটনৈতিকরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাছে জানতে চান- তাদের মূল নেতা কে ? এমন প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন জানান, এই ঐক্য যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আরেকজন জানাতে চান, ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? এসময়ে কামাল হোসেন বলেন, এটা সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্ধারণ করা হবে। আগে থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়নি। অপর একজন কূটনৈতিক জানতে চান, ঐক্যফ্রন্টের দাবিসমূহ বাংলাদেশের সংবিধানের অন্তর্ভূক্ত নয়। সেক্ষেত্রে তারা কি করবেন জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান দেশের জনগণের জন্য। তারাই এটার মালিক। তাদের প্রয়োজনে এটা পরিবর্তন করা যায়। এসময় তিনি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন ও সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, এবার ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে এই সংবিধান সংশোধন করেছেন। কিন্তু দেশের কল্যাণে এটার পরিবর্তন সম্ভব। তিনি বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে শান্তি ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে। কিন্তু সেটাকে বাদ দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে এবং জাতীয় সংসদকে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এসময়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, এই কমিশনের অধীনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা সম্ভব না। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়টি এসময়ে উপস্থাপন করেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, যেখনে কোনো ঘটনাই ঘটে নাই, সেখানে হাজার-হাজার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহনে নির্বাচনী আয়োজন ব্যাহত করা হয়েছে।
বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশ করার প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি উপস্থাপন করে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিগত দুই বছর ধরে ক্ষমতাসীন দল তাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেও বিরোধী দলের অনুমতি দেওয়া হয় না। এটা দিয়ে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই অকেজো করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা তো নির্বাচনে যেতে চাই। নির্বাচনে যাওয়ার জন্যই এই মুহূর্তে তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচনে যাবো বলেই তো নির্বাচনের পরিবেশটা চাই। আর নির্বাচনে না গেলে তো পরিবেশ চাওয়ার দরকার নেই।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, কাতার, মরক্কোসহ ৩০টি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।