বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৭:১৪ অপরাহ্ন
মৃদুভাষণ ডেস্ক :: সৌদি আরবের কাছে হত্যার শিকার সাংবাদিক জামাল খাসোগির লাশ চেয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ কে দিয়েছিল? তার দেহ-ই বা কোথায়? সৌদি আরবের কাছে এসব প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন এরদোগান। এ খুনের ঘটনা সম্পর্কে তুরস্ক যতটুকু তথ্য-প্রমাণ দিয়েছে তার চেয়ে আরও বেশি তথ্য তাদের হাতে আছে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন এ কে পার্টির বৈঠকে দেয়া এক ভাষণে এসব কথা বলেন এরদোগান। এদিকে খাসোগি সৌদি আরবের বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক বিশেষ দূত। খবর বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ানের।
এরদোগান বলেন, ইস্তাম্বুলে খাসোগির দেহ সরিয়ে ফেলার জন্য সৌদি গুপ্তচররা স্থানীয় যে ব্যক্তির হাতে তা তুলে দেয়, তার পরিচয় জানানো দরকার রিয়াদের। সৌদি আরব বৃহস্পতিবার খাসোগি হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত বলে স্বীকার করেছে। এর আগে তারা দুর্বৃত্ত অভিযানে ভুলক্রমে খাসোগিকে মেরে ফেলা হয় বলে জানিয়েছিল। এ খুনের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি আরবসহ দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও সংকটে পড়েছেন।
এরদোগান প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এ হত্যার নির্দেশ কে দিয়েছে? ১৫ জনের দলটিকে কে তুরস্কে আসার নির্দেশ দিয়েছে? তার লাশ কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে বা ফেলে দেয়া হয়েছে, সৌদি আরবকে তা জানাতে হবে।’
১৫ সদস্যের এ সৌদি নিরাপত্তা টিম খাসোগি খুন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছিল। রোববার সৌদি সরকারি কৌঁসুলির সঙ্গে ইস্তাম্বুলে তুরস্কের কৌঁসুলির সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে বলেও জানান এরদোগান। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবেরই রাষ্ট্রীয় টিভিতে এ সৌদি কৌঁসুলিই খাসোগি হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলে জানিয়েছেন।
গত ২ অক্টোবর খাসোগি তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকে নিখোঁজ হন। সৌদি আরব প্রথমে তার ব্যাপারে কিছু জানার কথা অস্বীকার করে। দীর্ঘ ১৭ দিন পর তারা ওই কনস্যুলেটেই খাসোগি খুন হওয়ার কথা স্বীকার করে এবং ঘুষাঘুষিতে তিনি মারা যান বলে জানায়। আন্তর্জাতিক মহল এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় তারা একাধিকবার বিবৃতি পাল্টায়। দুর্বৃত্ত অভিযানের কারণে ভুলক্রমে খাসোগি খুন হন বলে তারা ব্যাখ্যা করেন।
খাসোগি খুনের ঘটনাকে সৌদির রাষ্ট্রীয় মদদে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ অ্যাগনেস কলামার্ড। বৃহস্পতিবার আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্বিচারী মৃত্যুদণ্ড পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত।
কলামার্ড বলেন, প্রথমত আমরা জানি, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে দূতাবাসে, যা সৌদি আরবের অধীন। দ্বিতীয়ত খাসোগি নিখোঁজ ও হত্যার সময় সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি। আর গত কিছুদিন ধরে সৌদি আরব যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বুলি আওড়াচ্ছে, তারাও এ রাজতন্ত্রের প্রতিনিধি। এসব ঘটনায় টের পাওয়া যায়, খাসোগির নিখোঁজ হওয়া ও তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।’
এদিকে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাসহ হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস হয়। অস্ট্রেলিয়া এ প্রস্তাব উত্থাপন করে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের পর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সৌদির দেয়া ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। খাসোগির হত্যাকাণ্ড মূলত ‘সৌদি আরবে মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, লেখক ও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়নের অংশ।’ এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণের মতো নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
ডাচ এমপি মারিয়েতজ শ্যাকে বলেন, ‘সৌদি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা প্যারিসে কেনাকাটা করতে পারবেন না। সন্তানদের ইউরোপের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পাঠাতে পারবেন না।’